নিহত আবছারের স্ত্রী সামিনা ও মেয়ে আলিফা‘আমার দুই সন্তানের মধ্যে ইয়াসিন আরাফাতের বয়স ছয় বছর, আরেক সন্তান আলিফার বয়স মাত্র দেড় বছর। এই অবুঝ বয়সেই তারা তাদের বাবাকে হারিয়েছে। আমার কাছে তারা বারবার জানতে চায় বাবা কোথায় ? কিন্তু সন্তানদের দিকে তাকিয়ে এখনও জানতে দেইনি তাদের বাবা দুনিয়াতে নেই। কী করে বলি তাও ভেবে পাচ্ছি না।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলেন কক্সবাজারে নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবছার কামালের স্ত্রী সামিনা আক্তার।
গত ১৭ জুন কক্সবাজার সদর ইউনিয়নের খুরুশকুলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা করা হয় আবছার কামালকে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দীনসহ অন্যরা আবছারকে খুন করে। ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনও এই হত্যায় সরাসরি অংশ নেন বলে দাবি করেছেন নিহত আবছারের স্বজনরা। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জসিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।
আবছার কামালের স্ত্রী সামিনা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন দুপুরে আমার স্বামীর মামাতো ভাই জালাল উদ্দিন ও ভাতিজা বেলাল উদ্দিন তাদের সমবয়সী কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তুলছিল। সে সময় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের ফুফাতো ভাই শফিউল্লাহ মোটরসাইকেলে আসার পথে বেলালের সঙ্গে তর্কে জড়ায় । তখন তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বেলালদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে শফিউল্লাহ চলে যায়।’
সামিনা আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ পর চেয়ারম্যান জসিমের নেতৃত্বে শফিউল্লাহসহ আরও ৮/১০ জন লোক হাতে বন্দুক, হকিস্টিক, রড, লাঠি ও হাতুড়ি নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনের নির্দেশে তার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দীন, একই এলাকার শফিউল্লাহ, মনসুর আলম, নাগু ও ধলা মিয়াসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন আমাদের বাড়িতে ঢুকে দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। ওই সময় আমি এবং আমার স্বামী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। একপর্যায়ে গিয়াস উদ্দীন ও শফিউল্লাহসহ অন্যরা আমাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এ সময় তারা আমার স্বামীকে মারতে মারতে বাড়ির সামনের রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হকিস্টিক ও রড দিয়ে মাথার পেছনে, ঘাড়ে এবং বুকে আঘাত করে। শেষে চেয়ারম্যান জসিমও আমার স্বামীকে হকিস্টিক দিয়ে ফের মাথায়, মুখে ও বুকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশী এবং খুরুশকুল ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ কামালের সহায়তায় আমার স্বামীকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আমার স্বামী আবছারকে মৃত ঘোষণা করেন।’
সামিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ভালো লোক ছিলেন। স্থানীয় চিংড়ি প্রজেক্টে মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু ঘাতকরা তাকে বাঁচতে দিলো না। এখন আমার আর সন্তানদের কী হবে, ভেবে পাচ্ছি না।’
নিহত আবছার কামালের বড় ভাই ও মামলা বাদী ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘চেয়ারম্যান জসিম ও তার লোকজনের হামলা ও ভাঙচুরের কারণে আমাদের আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে খুরুশকুল ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন মেম্বার আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আমার ভাইয়ের খুনের ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা মামলা তুলে নিতে আমাদের নানাভাবে হুমকিও দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে, আবছারকে হত্যার ঘটনায় গত ২১ জুন কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘জসিম উদ্দীন চেয়ারম্যান একজন সন্ত্রাসী। একসময় তার বাহিনীর কারণে খুরুশকুল অশান্ত ছিল। সেই চিত্র এখনও বদলায়নি। শুধু তাই নয়, চেয়ারম্যান হওয়ায় ইয়াবা ব্যবসা ও সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে সে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। ’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে এখন কারাগারে রয়েছে। অন্য আসামিরা এখনও পলাতক । পুলিশ অপরাধীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। কেউ যদি বাদীকে হুমকি দিয়ে থাকে, অবশ্যই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’